Dhaka Mafia এর হাতে গুম হওয়া সাংবাদিক কাজলের গল্প!

#BAL_Regime  #ঢাকা_মাফিয়া #Dhaka_Mafia #গুম_খুন_ক্রসফায়ার  #Step_Down_Hasina


‘কবরে মানুষ যেভাবে থাকে, সেভাবে ছিলাম,’ গুম থাকার দিনগুলো সম্পর্কে বললেন তিনি। ‘খুব ছোট্ট একটা বদ্ধ জায়গা। কোনো জানালা নেই।’

আমার চোখ- মুখ বাঁধা ছিল। হাত পেছনে হাতকড়ায় বাঁধা। বেনাপোলে না ছাড়া পর্যন্ত ৫৩ দিন এই অবস্থায় আমি। আমি কেবল দিন গুনতে পেরেছি।’.... কেবল পরিবারের কথা ভেবে দিন পার করেছি। আবার তাদের সঙ্গে দেখা হবে কিনা। এ সময় মনে হলো, আমি আর ফিরতে পারব না’ বললেন তিনি।

গুগলে কেবল সাংবাদিক কাজল লিখলেই আসতে থাকে রাশি রাশি নিউজ লিংকঃ

দ্য ডেইলি স্টার এর সৌজন্যে পড়ুন Dhaka Mafia কর্তৃক দীর্ঘদিন গুম এবং বিনা বিচারে কারান্তরীন থাকা সাংবাদিক কাজলের মুক্তি পর প্রথম পরিপূর্ণ সাক্ষাৎকার এর সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটিঃ

*****************

প্রায় নয় মাসের না-কামানো কাঁচাপাকা দাড়ি গাল বেয়ে নেমে গেছে কাজলের। দাঁড়িতে হাত বোলাতে-বোলাতে মৃদু হেসে বললেন, ‘ভাবছি দাড়িটা শেভ করব না। দাড়িটা ভালোই লাগছে। কিছুটা ছেঁটে নিয়েছি শুধু।’

‘কিন্তু যে নাপিতের কাছে কাটাতাম...তাকে খুঁজে পেলাম না। নতুন একজনের কাছে যেতে হলো,’ বললেন কাজল...এই কথায় মনে করিয়ে দিলেন যে তার জীবন থেকে ৯ মাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

কাজল গত বছর ১০ মার্চ নিখোঁজ হন। এর ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাকে সেখানে ‘ঘোরাফেরা’ করতে দেখতে পায়।

এরপর একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর ও যুব মহিলা লীগের দুই কর্মীর করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাত মাস নিম্ন আদালত তার জামিন দেননি। হাইকোর্ট গত ২৪ নভেম্বর তাকে একটি মামলায় জামিন দেন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাইবার ট্রাইব্যুনালকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

কাজলের আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, এসব মামলার ৭৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হয়। এক্ষেত্রে তদন্তকারীরা ব্যর্থ হয়েছেন। এ বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করা হলে, অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আরও দুটি মামলায় জামিনের আদেশ দেন।

২৫ ডিসেম্বর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন কাজল।

কাজল এখন কিছুটা খুঁড়িয়ে হাটেন, রাতে তার সারা শরীর ব্যথা করে। মানসিক সুস্থতার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তিনি। তবে স্বস্তি হচ্ছে অন্তত তিনি বাড়িতে আছেন।

তবে, সেইসব দিনগুলো নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু, উদ্বেগের ব্যাপার হলো কিছু কথা না বলাকে তিনি শ্রেয় মনে করেছেন।

‘কবরে মানুষ যেভাবে থাকে, সেভাবে ছিলাম,’ গুম থাকার দিনগুলো সম্পর্কে বললেন তিনি। ‘খুব ছোট্ট একটা বদ্ধ জায়গা। কোনো জানালা নেই।’

‘আমার চোখ- মুখ বাঁধা ছিল। হাত পেছনে হাতকড়ায় বাঁধা। বেনাপোলে না ছাড়া পর্যন্ত ৫৩ দিন এই অবস্থায় আমি। আমি কেবল দিন গুনতে পেরেছি।’

‘এটা বর্ণনা করার মতো না। কেবল পরিবারের কথা ভেবে দিন পার করেছি। আবার তাদের সঙ্গে দেখা হবে কিনা,’ বললেন তিনি।

‘এক সময় মনে হলো, আমি আর ফিরতে পারব না।’

কারা তাকে এভাবে রেখেছিল, তিনি কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন না কাজল। অপহরণকারীদের বিষয়ে বা বন্দী থাকার সময়ে কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছে জানতে চাইলে কাজল সে সবও জানাতে রাজি হননি।

তিনি কেবল বললেন, ‘প্রচুর সমস্যা। সারারাত পেইন করে আমার শরীর। পেইন তো যশোর ও ঢাকা পর্যন্ত বহন করলাম।’

তার সঙ্গে যা যা হয়েছে, তা নিয়ে পুরো প্রশাসনকে দোষারোপ করার বিষয়ে তিনি সতর্ক করেন।

বললেন, ‘আমি সম্ভবত ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার। সরকারের ছোট্ট একটা অংশের কিছু লোকের ষড়যন্ত্র। এর জন্য পুরো প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। দোষ কেবল কয়েকজন লোকের, যারা এটা সাজিয়েছে। আমি বলব যে তদন্তকারীরা তাদেরকে খুঁজে বের করুক।’

৭ মাস কারাবাস:

৫৩ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর কাজলের স্থান হয় কারাগারে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও, সেখানে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।

তিনি বলেন, ‘যশোর কারাগারটি ভালই ছিল। তারা মানবিক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার একেবারেই উল্টো।’

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ‘গণরুমে’ রাখা হয়। যারা জায়গা ও খাবারের জন্য টাকা দিতে পারে না, তাদের জায়গা হয় সেখানে। বন্দীদের পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়।

কাজল বলেন, ‘অনেক বন্দী আছে যাদের জন্য রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আসে। আর, আমি আমার ছেলেকে একবারও দেখতে পেলাম না।’

কাজল জানান, কারাগারে তার ফোন কলগুলো নজরদারি করা হয়। ‘আমাকে এক বা দুই মিনিটের জন্য কথা বলতে অনুমতি দেওয়া হতো। জেল কর্মকর্তার সামনেই কথা বলতে হতো।’

মুক্তির অপেক্ষায় থাকা কাজল পরিবারের ভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে কারাগারের লাইব্রেরিতে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। ভাবনায় অবশ্য সারাক্ষণ পরিবারই ছিল। ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরা স্ত্রী, ২০ বছর বয়সী ছেলে ও স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। তাদের অন্ন সংস্থানকারী পরিবারের কর্তা কারাগার বন্দী।

তিনি বলেন, ‘ফোনে আমি ছেলেকে বাড়ির খরচের জন্য টাকা আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি। আমি কেবল জানতে চাইতাম, এ মাসে বাসা ভাড়া দেওয়ার টাকা আছে কিনা।’

আপাতত কাজল বিশ্রাম নিতে চান। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে চান। কাজল বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি আবার কাজে ফিরে যেতে চাই।’ 

নিউজের লিংকঃ


ওনার গুম হওয়ার নেপথ্যে কাহিনীঃ

যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে  মাগুরা -১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর বাদী হয়ে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেন, তাতে আসামির তালিকায় কাজলের নামও রয়েছে। সরকার দলীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন। মামলা হওয়ার পরদিন ১০ মার্চ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ ছিলেন।

কাজলের খোঁজ মিলছে না জানিয়ে প্রথমে চকবাজার থানায় জিডি ও পরে মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধান দাবিতে পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন ও সাংবাদিকরা মাঠে নেমেছিলেন।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে এক পর্যায়ে কাজলের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভিডিওতে কাজল নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগের চিত্র উঠে এসেছে বলে দাবি সংস্থাটির।ওই ফুটেজে কাজলকে একটি জায়গায় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের কোথাও যেতে দেখা যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান তিনি। 

এর মধ্যে তার ওই মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।তবে ওই ফুটেজ ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তেমন কিছু মেলেনি বলে জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।এদিকে ঘটনার প্রায় ২ মাস পর সাংবাদিক কাজলকে বেনাপোলের রগুনাথপুর সীমান্ত থেকে উদ্ধার দেখায় বিজিবি। 

তবে এ্ি উদ্ধারের ঘটনাকে রহস্য জনক বলছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। আজ যশোরের আদালতে সাংবাদিক কাজলকে হাজির করা হলেও উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে তারে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। মুখ ভর্তি দাঁড়ি ও এলোমেলো চুলে মলিন চেহারার কাজল এসময় আদালতের কাঠ গড়ায় দ৭াড়িয়ে সাংবাদিকদের দিখে ফ্যাল ফ্রাল নয়নে চেয়ে কি যেন বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিশী হস্তক্ষেপে সাংবাদিকরা কাজলের সাথে কথা বলতে পারেনি।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনঃ

তিনি নিখোঁজ হওয়ার ৫৩ দিন পর গভীর রাতে যশোরে বেনাপোল সীমান্তের একটি মাঠ থেকে তাকে উদ্ধার করার কথা বলা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।

তখন এই সাংবাদিককে দুই হাত পেছনে দিয়ে হাত কড়া লাগিয়ে আদালতে নেয়ার ছবি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল।

এরপর তেসরা মে থেকে থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

তবে তিনি নিখোঁজ হওয়ার আগেই গত ১০ই মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায়।

যুব মহিলা লীগের দু'জন নেত্রীও তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দু'টি মামলা করেছিলেন।

কয়েকটি মামলায় গত তেসরা মে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।

গত ১৭ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট দু'টি মামলায় তাকে জামিন দিলে তার মুক্তির সুযোগ তৈরি হয়।

পক্ষকাল নামে একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল একই সাথে দৈনিক খবরের কাগজ বণিক বার্তার আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন। নিউজ লিংক 


ধৈর্য সহকারে পড়ুন 

 লেখাটি এমন অনেকেই হয়তো পড়বেন, যারা জানেন না বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গোপনে আটক ও নিপীড়নের ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটে। তারা হয়তো ভাবতে পারেন, ভারত সীমান্তের কাছে ৩ মে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে গ্রেফতারের মানে হচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ১০ মার্চ তাকে তুলে নেয়নি এবং ৫৩ দিন ধরে গোপন কারাগারে আটকে রাখেনি। তারা হয়তো মনে করতে পারেন, ৩ মে তাকে গ্রেফতারের মানে হচ্ছে, কোভিড-১৯ লকডাউনের কড়াকড়ি ফাঁকি দিয়ে কাজল কোনো ভাবে হয়তো ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করে ছিলেন। আর যখন অবৈধভাবে দেশে ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তখন গ্রেফতার হয়েছেন।

এমন ভেবে থাকলে তারা ভুল করবেন। যখন কাউকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে গোপনে আটক করে রাখা হয়, তখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরণের গোপন আটকের (পড়ুন: গোপন কারাবাস) সমাপ্তি টানার সবচেয়ে প্রচলিত নাটক হচ্ছে তথাকথিত “গ্রেফতার”।

বাংলাদেশে এ ধরণের গোপন আটক বা অপহরণের সমাপ্তি ঘটে দুই ভাবে। প্রথমটি হচ্ছে, গোপনে আটক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। কখনো কখনো আটক ব্যক্তিকে খুন করে কর্তৃপক্ষ স্রেফ মৃতদেহ ফেলে রেখে যায়, যেন পরে পাওয়া যায়। প্রায় সবসময়ই এই ব্যক্তিটি পুরুষ হয়ে থাকেন। যদি ওই ব্যক্তির কোন অপরাধের রেকর্ড থাকে অথবা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়ে থাকে, তাহলে হত্যাকে “ক্রসফায়ার” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এরপর অনিবার্যভাবে সরকারি কর্তৃপক্ষ এক বিশদ গল্প প্রসব করে যে, কীভাবে ওই “অপরাধী” গ্রেফতার এড়াতে, পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই খুন হয়ে যায়।

অন্য সময় যেটা ঘটে তা হলো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোপনে আটক ব্যক্তিকে খুন করে মৃতদেহ এমনভাবে গায়েব করে যেন তার আর হদিশ কোনও দিন না পাওয়া যায়। যাদেরকে বহু বছর আগে তুলে নেয়া হয়েছে কিন্তু এখনো নিখোঁজ আছেন, তাদের পরিণতি খুব সম্ভবত এমনটাই হয়েছে।

যদিও তুলে নেয়ার পর নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি অংশ পরিণতিতে খুন হন, তবে বেশীরভাগই বেঁচে যান। বেঁচে যাওয়াদের কমপক্ষে অর্ধেক ক্ষেত্রেই কিছু সময় গোপনে আটক থাকার পর মুক্তি পান। এই মুক্তি ঘটে দুই উপায়ে। একটি হলো, আটক ব্যক্তিকে মাঝ রাতে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মী হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাত মাস গোপন স্থানে আটক থাকার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে মুক্ত হন; শিক্ষক ও গবেষক মুবাশ্বের হাসান ও সাংবাদিক উৎপল দাসকে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ছেড়ে দেয়া হয়, যথাক্রমে ৪৪ দিন ও আড়াই মাস আটক রাখার পর; ২০১৯ সালের মে মাসে মুক্তি পাওয়ার আগে অবসরপ্রাপ্ত কূটনৈতিক মারুফ জামান গোপন স্থানে আটক ছিলেন মোট ১৭ মাস।

গোপন কারাগারে আটকাবস্থা থেকে ফিরে আসার পর উল্লেখিত ব্যক্তিরা বা তাদের পরিবারের কেউ তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেননি। কিংবা, তাদের নিখোঁজ হওয়া বা ফিরে আসার ঘটনা নিয়ে কোন তদন্তের আহ্বান জানাননি।

বিকল্প আরেকটি পরিণতি, যেটি আরও বেশি ঘটে, সেটি হলো মুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই পুলিশের হাতে তারা গ্রেফতার হোন কোন ধরণের সাজানো নাটকের মাধ্যমে। সাংবাদিক কাজলের সাথে খুব সম্ভবত এটাই ঘটেছে। তাকে বেনাপোলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০০ গজ দূরে “ক্ষেতের মধ্যে হাঁটাহাঁটি” করার সময় গ্রেফতার করা হয়।

গোপন স্থানে আটক ছিলেন, এমন আরও অনেকের সাথে একই রকমের ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটা সন্ত্রাসী হামলার কথা মনে করা যায়। তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত রেজা করিম নামে দুই নিরপরাধ ব্যক্তিকে এক মাস গোপন স্থানে আটক রাখা হয়েছিল। ওই হামলার রাতে তারা ওই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। পরে তাদেরকে গুলশানের রাস্তায় “পাওয়া” যায়। এরপরই ওই সন্ত্রাসী হামলায় যোগসাজশের অভিযোগে তারা গ্রেফতার হন। পরে অবশ্য তাদের অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী ইয়াসিন তালুকদারকেও সন্ত্রাসের অভিযোগে গ্রেফতার করার আগে তিন বছর গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়েছিল।

তবে কাজল রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী বা বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না। সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে ছিল না। বরং, সরকারি দলের সাথে তার ও তার স্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে। তার স্ত্রী আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা, যুব মহিলা লীগের একজন কর্মী। তাহলে তাকে কেন নিশানা করা হলো, যেখানে সাধারণত বিরোধী দলীয় অথবা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরাই এমন আটকের শিকার হয়ে থাকেন?

সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে নিয়ে মানবজমিন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ। এর পরই কাজলকে তুলে নেয়া হয়। পাপিয়ার বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তির এক গোপন নেটওয়ার্ক পরিচালনার অভিযোগ আসে, যেটির খদ্দের হিসেবে নাম আসে আওয়ামী লীগের কয়েকজন জৈষ্ঠ্য নেতা ও সংসদ সদস্যের।

একজন সংসদ সদস্য পরবর্তীতে মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক ও আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যারা ওই নিউজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্যদের পাপিয়ার খদ্দের হিসেবে উপস্থাপন করেন। কাজল ছিলেন ওই মামলার তালিকাভুক্ত ৩০ জনের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যাকে তুলে নেয়া হয়। এর কারণ হলো, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সন্দেহ করেন যে, ওই পতিতাবৃত্তি চক্রের বিষয়ে বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য জানেন। তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে তাদের নামও প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে।

কাজলের নিখোঁজ হওয়া একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে যে, কিভাবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের হয়ে ভাড়া খাটছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। আরেকটা সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে লন্ডন-ভিত্তিক ব্যবসায়ী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের কোম্পানির তিন কর্মকর্তার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর সাথে শহীদ উদ্দিন খানের ব্যবসায়িক সম্পর্কের অবনতি হয়।

ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্ররোচনায় ঘটা এসব ঘটনায় এটা ভুলে যাওয়া উচিৎ হবে না যে কিভাবে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের নির্দেশে বছরের পর বছর গুমের ঘটনা ঘটে আসছিল। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে তুলে নেয়ার তিন মাস পর নভেম্বর মাসে ছেড়ে দেয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মতে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই অনিরুদ্ধকে অপহরণ করে গোপনে আটকে রেখে তাকে চাপ দেয় যাতে তিনি পদত্যাগ করেন। অন্যথায় অনিরুদ্ধকে হত্যা করা হতো।

অভিযোগ রয়েছে যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও মীর আহমদ বিন কাশেমের গোপন আটকাদেশ আসে সরাসরি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এই তিনজন বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের তিন নেতার সন্তান যারা আটক হন ২০১৬ সালের আগস্টে। বাংলাদেশের বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই তিন নেতা দণ্ডিত হন। আমান আযমী ও মীর আহমদ হয়তো এখনো গোপন স্থানে আটক আছেন, নয়তো ইতিমধ্যেই খুন হয়ে গেছেন। আগে যেমনটি বলা হয়েছে, হুম্মাম কাদের সাত মাস পর মুক্তি পান।

যখন নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন কাউকে তুলে নিয়ে যায় ও গুম করে ফেলে, তখন তাদের পরিবারের লোকজন জানে না যে তাদের আসলে কী করতে হবে। তারা ভয় পায় যদি তারা তাদের আপনজনের মুক্তির জন্য প্রকাশ্যে প্রচারণা চালায়, তাহলে আলোচনার পথ নষ্ট হয়ে যাবে। অথবা, যারা আটকে রেখেছে তারা আটক ব্যক্তিদের খুন করবে। মোট গুমের বেশীরভাগই জনসম্মুখে না আসার এটা একটা কারণ। আর যদি কখনো আসেও, পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।

কাজলের মুক্তি চেয়ে প্রকাশ্যে তার ছেলের আহ্বান ও উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা বাংলাদেশে অস্বাভাবিক ঘটনা। হাই কোর্ট পরে কাজলের অন্তর্ধান নিয়ে একটি অপরাধ মামলা দায়ের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। এই দু’টি বিষয়ই হয়তো কাজলের মুক্তি তরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তবে, গোপন স্থানে আটকাবস্থা থেকে কাজলের “মুক্তি”র আগে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা তাকে খুব সম্ভবত বলে দিয়েছেন যে কোন অবস্থায়ই যেন তার বন্দীত্ব নিয়ে জনসম্মুখে কিছু বলা না হয়। কাজলকে হয়তো বলা হয়েছে যে, যদি তিনি নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেন, তাহলে কখনোই যেন সত্য কথাটি না বলেন।

অতএব, কাজলের গোপন বন্দীত্ব নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে হয়তো তেমন কিছু শুনবো না। অথর্ব বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ বাহিনী, ভীরু নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান না থাকায়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটা এসব অপহরণ ও খুনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তিরা ভয় কাটিয়ে সত্য কথা বলতে শুরু করবেন। ততদিন পর্যন্ত, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনীতিকরা তাদের অপরাধের দায়মুক্তি পেতেই থাকবেন। আপাতত কাজল বেঁচে ফিরেছে এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। আর আশা করা যায় যে, তার বিরুদ্ধে করা মামলা বাতিল হবে, যেন তিনি মুক্ত মানুষ হয়ে ফের মুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন।●

(ডেভিড বার্গম্যান নেত্র নিউজের ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক।) নিউজ লিংক


পড়ুনঃ Dhaka Mafia: শেখ পরিবারের দুঃশাসনের রক্ষাকবচ আজিজ পরিবারের ৫ খুঁটি! আল জাজিরার ভিডিও প্রতিবেদনের অনুবাদ ও পর্যালোচনা সমূহঃ লিংক



 #BAL_Regime#ঢাকা_মাফিয়া

#Dhaka_Mafia
#গুম_খুন_ক্রসফায়ার 
#Step_Down_Hasina

Comments

Popular posts from this blog

সচিবালয়কে 'হিন্দু-আলয়' -এ রূপান্তর! নেপথ্যে কারা? কি হতে চলেছে বাংলাদেশে?

জাপানে বাংলাদেশী রসায়ন বিজ্ঞানীর অনন্য আবিষ্কারঃ করোনার 'সাময়িক প্রতিরোধ' ও "চিকিৎসা" কেবল ১টি মাত্র ওষুধেই ( One Medicine Treatment)

কাল্পনিক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ডানপন্থী ব্লগারদের দুঃখের দিনের কান্ডারী ফারাবির নিঃশর্ত মুক্তি চাই