COVID19 ভ্যাক্সিন, ইন্ডিয়ান ভ্যাক্সিন, খোয়াব তত্ব ও ভ্যাক্সিন বিরোধিতার "হুজুগে ট্রেন্ড!"

গুগলে সার্চ করে দেখুন, পশ্চিমা বিশ্বে  ১০০% অর্গানিক খাবারের ক্যাম্পেইন যারা করেন, তারা ইন্টারনেট আবিষ্কারের বহু বছর আগে থেকেই ভ্যাক্সিন এর বিরোধিতা করে আসছেন (কোন ধরনের ভ্যাকসিন হয় না নেওয়ার জন্য)।

আমার ভিনদেশী ফ্রেন্ডসদের কাছ থেকে প্রায়ই আমি এসব লিংক পাই (ভ্যাকসিন না নেওয়ার জন্য)।

উনাদের কোর পয়েন্টটা হচ্ছে, মানুষ যদি ১০০% অর্গানিক খাবার খায়, তাহলে তার ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার পড়েনা, বরং অর্গানিক খাবার যারা খায় তারা ভ্যাকসিন নিলে নিজের স্বাস্থ্য ঝুকিপূর্ণ  হয়ে যেতে পারে। কাজেই, আপনি বা মুফতি কাজী ইব্রাহীম সাহেব যদি বিরোধিতা করতেই চান,  তাহলে ভ্যাকসিন এর চিন্তা  বাদ দিয়ে প্রথমে #নন_অর্গানিক #খাবারের_বিরোধীতা শুরু করে দিতে পারেন; যদিও জনসংখ্যাজনিত বাস্তবতার কারণে এটা চাইলেও সম্ভব না... অন্ততঃ আমাদের দেশে তো বটেই।

আমাদের আলেমদের কাছে এবং এ্যাক্টিভিস্টদের কাছে যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার সব ভ্যাকসিনই হালাল ছিলঃ  জলবসন্ত, হাম, যক্ষা, ডায়রিয়া, ডিফথেরিয়া, জন্ডিস, জলাতঙ্ক, হুপিংকাশি, সোয়াইন ফ্লু.... এই ভ্যাক্সিনগুলি নিয়ে তো আপনি বা অন্য কেউ বিরোধিতা করেননি! এগুলো নিশ্চয়ই জমজম কূপের পানি আর জয়তুন তেল দিয়ে বানায়নি?

আর  করোনার ভ্যাকসিনের মধ্যে যদি #গরুর_মুত্র বা অন্য কোন #হারাম_ইনগ্রেডিয়েন্টস থেকে থাকে, তার জন্য তো শরীয়তের সুস্পষ্ট মাপকাঠি রয়েছেই।

কিন্তু সেটার জন্য ইব্রাহীম সাহেবের "প্রতিনিয়ত হাস্যকর এবং অপ্রকৃতস্থ কথাবার্তার মধ্য থেকে" কেন দলিল খুঁজে বের করতে হবে?

আর ইব্রাহিম সাহেব যা বলছেন, সবকিছু তো পাবলিকলিই বলছেন। সবাই তা নিন নিজ জ্ঞান ও যোগ্যতা দ্বারা যাচাই করবেন এবং রিয়্যাক্ট করবেন, এটাই স্বাভাবিক।  আবার এমন নয় যে,  ওনিই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, আর বাকি সব বলদ!

আর আপনাকেইবা কেন রীতিমতো মশাল জ্বালিয়ে ওনার পক্ষে দলিল খুঁজে খুঁজে উনার খেয়ালী কথাবার্তাগুলির প্রমোট করতে হচ্ছে? এতে করে কি আপনার লাভ হচ্ছে, নাকি সংগঠনের লাভ  হচ্ছে আর নাকি এরকম আতংকজনক পরিস্থিতিতে আপামর মানুষের স্বাস্থ্যগত কোন প্রকার হচ্ছে?

বিঃ দ্রঃ আমার এই পোষ্টের সাথে  "ব্যাপক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াযুক্ত'' ভারতীয় ভ্যাকসিন এর বিষয়টা সম্পূর্ণ অ্যাপার্ট। কারণ এটা কারণ এটা নিয়ে অলরেডি খোদ ভারতীয়দেরই সমস্যা হয়েছে এবং তাদের "অতিরিক্ত গোমূত্র প্রীতির কারণে'' আমাদের দেশের মানুষ সেটার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান ও আতংকগ্রস্ত। 

কাজেই, এই পোস্টে ভারতীয় ভ্যাকসিন আমার আলোচনার প্রেক্ষাপট নয়। আলোচনার বিষয় হচ্ছে... সকাল-সন্ধ্যা নানাবিধ হাস্যকর ও অভিনব তত্ব প্রসবকারী জনৈক আলেমের সাম্প্রতিক আরেকটি অভিনব তত্ত্বের প্রেক্ষিতে করোনার সব ধরনের ভ্যাকসিনেশনের ঢালাওভাবে বিরোধিতা করা।

************


এই পোস্টের "মূল উদ্দীপক" তথা শ্রদ্ধাভাজন Apu Ahmed  ভাইয়ের ফেইসবুক পোস্টের লিংকঃ 


অভিনব তত্ব সম্পর্কে মুফতি ইব্রাহিম সাহেবের সাফাই (নিজের পক্ষে) :


আসুন, এবার একটু ব্যাপকভাবে জেনে নিই ভ্যাক্সিন বিরোধিতার সমৃদ্ধ ইতিহাসঃ

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ এবং অ্যাক্টিভিস্টগণের ক্ষুদ্র একটা অংশ ভ্যাকসিন এর বিরোধিতা করে আসছেন। নিচের খুব সহজ এবং সাবলীল ভাষায় লেখা ইংরেজি টেক্সটগুলি পড়ুনঃ

There are now hundreds of anti-vaccine websites on the internet, many of which still allege that vaccines cause autism or that autism is a form of “vaccine injury,” neither of which is true.

The anti-vaccine movement also effectively uses social media to share their message. Some studies show that anti-vaccine social media has created an “echo chamber” effect that strongly reinforces negative attitudes towards vaccines.

Web link


২০০৪ সালের লিংকঃ Vanishing vaccinations: why are so many Americans opting out of vaccinating their children?


Health and medical scholars have described vaccination as one of the top ten achievements of public health in the 20th century.[1] Yet, opposition to vaccination has existed as long as vaccination itself[2] (indeed, the pre-vaccination practice of variolation came under criticism as well: see our timeline for details). Critics of vaccination have taken a variety of positions, including opposition to the smallpox vaccine in England and the United States in the mid to late 1800s, and the resulting anti-vaccination leagues; as well as more recent vaccination controversies such as those surrounding the safety and efficacy of the diphtheria, tetanus, and pertussis (DTP) immunization, the measles, mumps, and rubella (MMR) vaccine, and the use of a mercury-containing preservative called thimerosal.

Web link: 


পড়ুনঃ উইকিপিডিয়ায় 'ভ্যাক্সিন হ্যাজিট্যান্সী' শিরোনামের প্রবন্ধ

Anti-Vaccination Movement

The anti-vaccination movement that gripped Victorian England:

US concerns that Trump will rush to approve a vaccine before election is playing into wider safety fears: Web লিনক

ভ্যাকসিনেশন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামতঃ
আমার নিজের বক্তব্য হচ্ছে ভ্যাক্সিনেশন বিষয়টি যেহেতু সম্পূর্ণ একটি মেডিকেল+সায়েন্টিফিক টার্ম, আমি খাদ্য, ওষুধ এবং বিভিন্ন ক্যামিকাল এর ক্ষেত্রে যেভাবে  বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকি, ভ্যাকসিনেশনকেও আপাততঃ এর বাইরে ভাবছিনা এবং রাখছিনা।

পূর্বেকার ইতিহাস গুলি পড়ে  জলবসন্ত, গুটি বসন্ত, জলাতঙ্ক .... ইত্যাদি রোগের বিস্তার প্রতিরোধে ভ্যাকসিনেশনের ভূমিকা যখন ভাবি, তখন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে পারি না।

 সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে যদি আলেম সমাজের কোনো ভিন্ন অপিনিয়ন থাকে, সে ওপিনিয়নগুলি Well studied & well researched হওয়া জরুরী এবং সেজন্য সময় দরকার। 

ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীদের বছর বছর সময় লাগে, স্বাভাবিকভাবে সে রকম জটিল একটা বিষয় নিয়ে আপনি একদিনেই হঠাৎ করে একটা ফতোয়া দিয়ে দেবেন, সেটা অযৌক্তিক নয় কি?

আর এটাও সত্য যে একটা হারাম বা জীবন সংহারী জিনিস দুনিয়ার সকল বিজ্ঞানী বা সব মানুষও যদি ভালো বলেন বা হালাল বলেন, সেটা হারামই। কিন্তু সেটা উচ্চস্তরের মুসলিম বিজ্ঞানীগণ এবং বিজ্ঞ আলেমগণের সমন্বিত  ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে আসতে হবে, ফেইসবুক-ইউটিউব বা খোয়াবের মধ্য দিয়ে নয়। 

এই বিতর্কের অবসানকল্পে অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত রিচার্চ করার জন্য মুসলিম সরকারপ্রধানগণ সময়োপযোগী  উদ্যোগ নেবেন এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথের দিশা দেবেন এই আশা রাখি। 

আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। সবাইকে হিদায়াত দান করুন, আমিন।


Comments

Popular posts from this blog

সচিবালয়কে 'হিন্দু-আলয়' -এ রূপান্তর! নেপথ্যে কারা? কি হতে চলেছে বাংলাদেশে?

জাপানে বাংলাদেশী রসায়ন বিজ্ঞানীর অনন্য আবিষ্কারঃ করোনার 'সাময়িক প্রতিরোধ' ও "চিকিৎসা" কেবল ১টি মাত্র ওষুধেই ( One Medicine Treatment)

কাল্পনিক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ডানপন্থী ব্লগারদের দুঃখের দিনের কান্ডারী ফারাবির নিঃশর্ত মুক্তি চাই