মুনিয়া হত্যার ঘটনায় সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে নিজেরাই হাসির খোরাক হলো "পোষা সাংবাদিকেরা"
বিভিন্ন প্রতিবেদনগুলোতে প্রকাশিত বেসিক ইনফোগুলি ঠিকই আছে। মুনিয়াকে রাবেয়া বসরী ভাবার সুযোগ নাই। মুনিয়ার আপন ভাইয়ের সাক্ষাৎকার থেকেও বিষয়টা ক্লিয়ার। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার বোনটা একটা জেনুইন মক্ষীরানি, no doubt.... তাহাজ্জুদ প্রসংগ তুলে আনাটা ওই বদমাইশ মহিলার জুচ্চুরির আরেকটা উৎকৃষ্টতর প্রমাণ।
এছাড়াও ফেইস দা পিপল এবং অন্যান্য মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্যগুলো বিভিন্নভাবে অসংলগ্ন ছিল মূলতঃ গা বাঁচানো বলতে যা বোঝায় সে রকমই।
এবার আসি, মিডনাইট সরকারের গৃহপালিত মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলিতে ঘাপলা কোথায়ঃ
১. খাঃ পোঃ খ্যাত বাাংলাদেশের সাংবাদিকরা যেহেতু টাকা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে, ওরা মালিকপক্ষকে ডিপেন্ড করবে এটাই স্বাভাবিক । কাজেই মালিকপক্ষ যেমন মেয়েটিকে খুন করার প্রত্যক্ষ অযুহাত বা কারণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা চুরির একটা বানোয়াট কিসসা দাঁড় করিয়েছে ("হত্যাকাণ্ডের" পক্ষেই কোন অযুহাতই আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়), এই পোষা **রগুলোও ওই পয়েন্টটা ফোকাসিং করে মেয়েটাকে (ও তার ফ্যামিলিকে) হ্যাভিলি ডিফেমিং করতে ওই ডাহা মিথ্যাটা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে!
ভাবটা এমন... অত বড় চোরের ঘরের চুরনীকে হত্যা করে তানভীর বরং মহা পুণ্যের কাজই করেছে। তাছাড়া এই অভিযোগটা ভালোমতো দাঁড় করাতে পারলে এটাও প্রমাণ করা যায় যে মেয়েটা প্রেম ভালোবাসা নয়, বরং কেবল আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যই আনভীরের সাথে এনক্লোজড হয়েছিল।
২. তাছাড়া 50 লাখ টাকা 'চুরির' অভিযোগ ব্যাংকের ভল্ট পাহারাদার বা হিসাবরক্ষণ পেশার সাথে সাথে সম্পৃক্ত নন, এরকম যেকোন সিভিলিয়ান এর বিপক্ষেই নিঃসন্দেহে ভিতিহীন এবং হাস্যকর। কেননা, এত হায়ার ফিগারের টাকা নগদ লেনদেন করার সুযোগ নাই। তাছাড়া এটা যদি কোনভাবে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু, ব্যাংক ট্রানজেকশন কিংবা ইনভেস্টমেন্ট ইস্যু হয়ে থাকতো... তাহলে তার স্বপক্ষে প্রমাণ আপলোড করাটা খুবই সহজ হত খুনীদের পক্ষে। যা খুনিরা করেনি। বাস্তবতা হলো, করতে পারবেও না। কারণ অভিযোগগুলি টোট্যালি বানোয়াট এবং তড়িঘড়ি করে বানানো।।
পরিহাসের বিষয় হলো,মেয়েটার বয়স এবং সার্বিক পরিস্থিতিতে যদি 50000 কিংবা 100000 মতো হত.... এটা স্বাচ্ছন্দে প্রমাণ করা যেত যে, সে তা আনভির এর পকেট থেকে কিংবা সাথে থাকা র্যাকস্যাক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
যদিও তাদের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড নির্ভর জীবনে এটার পক্ষেও খুব একটা জোরালো যুক্তি পাওয়া যাবেনা; তারপরও বলা যেতে পারে ব্যবসায়িক কারণে ৫/১০ লাখ টাকা তোলে আনভির নগদ টাকা সহ ব্যাগ নিয়ে মেয়েটির ফ্লাটে গিয়েছিল, ওই সময় মেয়েটা লাখ খানেক মেরে দিয়েছে।
কিন্তু ৫০লাখ টাকা নিয়ে মানুষ সচরাচর মুভ করেনা, তা আনভির হোক কিংবা অন্য কোন কোটিপতি। আবার সেই এম্যাউন্ট এর টাকা কারো পক্ষে চুরি করে বহন করাটা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয় হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এতগুলো টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে বড় কোন বস্তা, ল্যাগেজ কিংবা কাটুনে করে নিয়ে যেতে হতো.... যা সিসিটিভিতে নির্ঘাত ধরা পড়তো।
*** পক্ষান্তরে, ওরা ২বোনকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে নিয়ে কিছু সত্য পয়েন্ট(স) এর সাথে তাদের অন্নদাতাদের এই বাটপারিমূলক ৫০লক্ষ টাকা চুরির কাল্পনিক বিষয়টা সংযুক্ত করে একাধিক খাঃপোঃ সাংবাদিকরা নিজেরাই ধরা খেয়ে গেছে এই যায়গায়।
প্রথম রিপোর্টের প্রতিপাদ্য হল মুনিয়া খারাপ, অতএব তাঁকে হত্যা করা ঠিক আছে। দ্বিতীয় রিপোর্টটির প্রতিপাদ্য হল মুনিয়ার বোন যেহেতু মামলা করেছে, বিচার চেয়েছে সেও লোভী, খারাপ। তাঁর বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। হত্যা না আত্মহত্যা -- এনিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। এই রিপোর্টগুলো দেখে আমার প্রত্যয় জন্মেছে - এটি আসলে হত্যা। খারাপ মানুষ আত্মঅভিমানে নিজের প্রাণ নেয় না, আত্মহত্যা করেনা - রাগ জেদ তৈরি হলে বরং আরও বেশি অপরাধে লিপ্ত হয়। প্রতিকারহীন নিরাপরাধ মানুষ উপায় না দেখে আত্মহণনের পথ বেঁছে নেয়। এইসব মিডিয়াগ্রুপ যেহেতু প্রমাণ করতে চাচ্ছে, মুনিয়া খারাপ নারী ছিলেন তখন এটি প্রতীয়মান হয় যে, মেয়েটিকে হত্যাই করা হয়েছে। এখন ভিকটিমকে খারাপ প্রমাণ করে সেই হত্যা জায়েজ করার চেষ্টা হচ্ছে। এরকম উদ্দেশ্যমূলক ভিক্টিম ব্লেমিং সাংবাদিকতা নয়, এগুলো ঘৃণ্য অপকর্ম। এই রিপোর্ট পড়া যায় না। এগুলো সমাজকে কলুষিত করছে। আপনার, আমার ঘরেও সন্তান আছে। এই পাপ কাউকে রেহাই দেবেনা। এগুলো সাংবাদিকতার বিরুদ্ধেও অপরাধের সামিল। এই অপরাধের হাত থেকে সাংবাদিকতাকে রক্ষায় একাট্টা হও সাংবাদিক সমাজ। শতকোটি প্রলোভনেও আমরা কেউ যেন এরকম ঘৃণ্য অপকর্মে লিপ্ত না হই। কেউ আমরা চিরদিন বেঁচে থাকব না, কিন্তু আমাদের কাজগুলো থেকে যায়। ক্ষণিকের প্রাপ্তিতে মানবিকতাকে যেন পরাভূত না করি। না খেয়ে মরব, কিন্তু এইসব জায়গায় আপোষ করব না। সাংবাদিকতায় মানুষের বিবেকের বাণী প্রকাশিত হক। দুর্বৃত্ত পুঁজির কবল থেকে সাংবাদিকতা মুক্তি পাক। মহান মে দিবস সাংবাদিকতার কলমকে মুক্তির হাতিয়ারে রূপান্তরিত করুক।
বড় বোনের সম্মতিতেই কি মুনিয়ার উচ্ছৃঙ্খল জীবন?
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ২২:০১ | আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ২২:১৬ | নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তরুণী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনা নানা ডালপালা মেলছে। আত্মহত্যায় মারা যাওয়া ওই তরুণীর জীবনযাত্রা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কলেজপড়ুয়া ছাত্রী থাকতেন লাখ টাকার বাসায়। ভাড়া আসতো কোথা থেকে? জীবনযাপন, পড়াশোনার খরচই বা দিতো কে?
বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর বড়বোন নুসরাত জাহানই ছিলেন তার অভিভাবক। গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য থেকে জানা যায়, নুসরাত বোনের সব বিষয়েই জানতেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি তিনি জেনে শুনেই ছোটবোনকে এভাবে সমর্থন দিয়েছেন? বোনের দেখভালের যে দায়িত্ব তার ওপর ছিল তার কী তিনি পালন করেছেন? বোনকে কি উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছিলেন তিনি?
এসব প্রশ্নের জবাব জানতে বৃহ্স্পতিবার নুসরাত জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমি মুনিয়াকে বিভিন্ন সময় বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সে বোঝেনি। এনিয়ে আমার সঙ্গে তার বিভিন্ন সময় বাকবিতণ্ডা হয়েছে। মনোমালিন্য হয়েছে। আমি তাকে বোঝাতে পারিনি।’
মুনিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরের উজির পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে। তার বাবা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান। তার বছর তিন পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে মাও অসুস্থ হন। মারা যান জুন মাসে। বাবা ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা। মা ছিলেন ব্যাংকার। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তার অভিভাবক হিসেবে বোন নুসরাতই ছিলেন। তাদের একমাত্র ভাই আশিকুর রহমান সবুজের সঙ্গে সম্পদের উত্তরাধিকার নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল। এজন্য একবার মামলাতেও নাকি যেতে হয়েছে দুই বোনকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুনিয়ার পরিবার গ্রামে একটি বাড়ি ছাড়া তেমন কোনো সম্পদ নেই। বোন নুসরাতের স্বামী একজন ব্যাংকার। মুনিয়ার পড়াশোনার খরচ একটা সময় বোন ও স্বামীই চালাতেন। তখন মুনিয়া কুমিল্লাতে থেকেই পড়াশোনা করত। পরে তিনি যখন ঢাকায় চলে আসেন তখন উচ্চাভিলাষী জীবনযাত্রার কারণে পরিবারের সঙ্গেও তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তার অনেক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বোন-ভাই খুশি ছিলেন না।
এদিকে মুনিয়ার বোন গণমাধ্যম এবং মামলার এজহারে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে মুনিয়া ঢাকার গুলশানে কোথায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তা তারা আগে থেকেই জানতেন। এই বাসা ভাড়াসহ তার জীবনযাপনের অর্থ কোথা থেকে আসছে সেটিও তারা জানতে। কিন্তু তারপরও তারা কেন বোনের বিপথগামিতার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, স্কুলজীবন থেকেই উচ্চাভিলাষী জীবনের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মুনিয়ার। অভিযোগ পাওয়া যায়, কুমিল্লাতে থাকতেই একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিলেন মুনিয়া। পরে ওই ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বোন নুসরাত মামলাও করেছিলেন। পরে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেও অভিনয় জগতের চাকচিক্যময় জীবনের প্রতিও নাকি আগ্রহ ছিল মুনিয়ার। এই জগতেও দু-একজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা নিয়েও বিভিন্ন সময় মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে মুনিয়া ও তার পরিবারকে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের কলেজপড়ুয়া মেয়ে হলেও মুনিয়ার চলাফেরা, জীবনযাত্রা, পেশাকপরিচ্ছদেও ছিল উচ্চবিত্তের ছাপ। তার ঘনিষ্ঠজন ও সহপাঠীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মুনিয়া তাদের সহপাঠী হলেও তাদের সঙ্গে তার জীবনযাত্রায় ছিল অনেক তফাত। এসব কারণে পড়াশোনাতেও অনিয়মিত ছিলেন মুনিয়া। তার বোন নুসরাত জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকায় আসার আগে মুনিয়া কথা দিয়েছিল ও এইচএসসির ফরমফিলাপ করবে। পরীক্ষা দেবে। আমি তার কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। ‘
জীবনযাত্রায় উচ্চাশা ও কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন জীবনে মুনিয়ার জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে পরিবারের দায়িত্বহীনতাকে বড় করে দেখছেন মনোবিদরা। তারা মনে করেন, মুনিয়ার বয়সের একজন মেয়ের ভালো-মন্দ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ততটা থাকে না। এক্ষেত্রে তাদের পরিবারের দিকনির্দেশনা ও যথাযথ পরামর্শ প্রয়োজন। মুনিয়া তা থেকে বঞ্চিত ছিল।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাবা-মা হারা মুনিয়ার বড় বোন ছিলেন অভিভাবক। কিন্তু তিনি প্রকৃত অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন কি না, এনিয়ে প্রশ্ন আসলে থেকেই যাচ্ছে। তবে মুনিয়ার বয়সী তরুণ-তরুণীরা অনেক সময় না বুঝে বিপথে পা বাড়ায়। এজন্য পরিবার-সমাজও দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
Comments
Post a Comment