শীর্ষ প্রত্যাবাসনএক্টিভিস্ট মাস্টার মুহিব্বুল্লাহর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও বাংগালদের রেসিজম তথা বর্ণবাদী সংকীর্ণতা
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
বিখ্যাত রোহিঙ্গা মুসলিম নেতা যিনি বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়ে প্রচারণা চালাতেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে যেতেন সেই মহিব উল্লাহ আজ কক্সবাজারের কুতুবপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন!!
রোহিঙ্গাদের একটি বড় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো!!
======
স্বরূপ উম্মোচন
আমরা বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশীরা কি রেসিজম মুক্ত??
যদিওবা পাশ্চাত্যে এটা জানাটা খুবই সহজ সাধ্য। যদি সাদা চামড়ার পাশে একজন কালো কিংবা বাদামী চামড়ার মানুষ থাকেন কিংবা ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ থাকেন তবে সেই ব্যক্তি যে ব্যবহার করবে তা থেকে দৃশ্যমান হবে রেসিস্ট, নাকি রেসিজম মুক্ত। আর একটা বিষয় রেসিস্ট যে কেবল সাদা চামড়ার হবে তাও না কালো চামড়ার লোকজন হিস্পানিক কিংবা মেক্সিকান কিংবা এশিয়ানদের বিরুদ্ধে রেসিজমের কারনে অভিযুক্ত হতে পারে। তবে সেখানে নিজেদের মধ্যে কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের রেসিজম নেই।
এখন আসি আমাদের কথায়! আমরা বাঙ্গালীরা আসলে অজন্ম রেসিস্ট ফ্যাসিস্ট এবং জুলুমের সহযোগি। যদি শুরু করেন একসময় হিন্দুরা বৌদ্ধ ধর্মের লোকজনকে কচুকাটা করেছে! আবার বৌদ্ধরা হিন্দু ধর্মের লোকদের কচুকাটা করেছে! ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এরাই উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে সংঘাত করেছে। এরা নিজেদের পারিবারিক জীবনে পর্যন্ত রেসিজমের আশ্রয় নিয়ে বাঁচে। যা বিয়ে শাদী কিংবা আঞ্চলিক সংস্কৃতিতে ফুটে আসে।
এরপরে মুসলিম শাসনামলে এই জিঘাংসা ও রেসিজম নাই হয়ে গেলেও সেখানেও একধরনের রেসিজম ছিলো। আর যার শিকার ছিলো সাধারন মুসলিমরা। রাজ পরিবারের সদস্যদের হাজারো অপরাধ মাফ! কিন্তু সাধারন মুসলিমদের যেকোন ভুলে কিংবা এই অন্যায়ের প্রতিবাদে জুলুমের শিকার হওয়া। সেখানেই শেষ নয় এর কার্যক্রম আরো বিস্তারিত আকারে শুরু করেছিলো মোঘলদের সাহায্য প্রাপ্ত হিন্দু সেনাপতি ও হিন্দু জমিদারগণ! কোন এলাকায় কিছু মুসলিম জমিদারগণও!
সিরাজ উদ দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সাদা চামড়া ও এদেশীয় জমিদার রেসিস্টরা সব এক হয়ে লেগে পড়ে। লক্ষ লক্ষ মুসলিম সব হারায়। তাদের সাংস্কৃতিক দাসত্ব শুরু করতে হয়। মুসলমানরা ৩য় শ্রেনীর প্রজায় পরিনত হয়ে যায়। যদিও একই ভাবে দেখতে। তবে ধর্মীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক আবরণ এখানে রেসিজমের মূল উপাদান হয়ে দাড়ায়। যার মূল প্রচারক ছিলো বঙ্কিম চন্দ্র, শরৎ চন্দ্র, ঈশ্বর চন্দ্র, রবীন্দ্র নাথ কিংবা রাম মোহন রায়রা। যারা মুসলিমদের শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত করতে চরম আগ্রাসি ছিলো। অন্য অধিকারতো বহু দূরের কথা!!
১৯৪৭ ব্রিটিশদের পরাজয়ে এই হিন্দু জমিদার ও সাদা চামড়াদের দালালদের প্রভূত্বে ব্যাপক হানি ঘটে। যদিও বা নতুন রেসিজমের সূচনা হয়। ভারতীয় জালিম হিন্দু জমিদারদের থেকে পালিয়ে আসা এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিকার হতে হয় এই রেসিজমের। যেহেতু এখানে মূল আলোকপাত বাংলাদেশ! তাই এই আলোচনা! তাহলে তারা কারা! উর্দু ভাষী মুসলিম সম্প্রদায়। যারা ১৯৫৬ থেকে প্রতিনিয়ত হত্যা ধর্ষণ ও খুনের শিকার হচ্ছিলেন! এমনকি যুদ্ধের সময়ে তারাই সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতার শিকার ছিলেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদি বাঙ্গালী বাংলাদেশীরা তার স্বীকৃতি তো দূর কি বাত তার মনে রাখারই প্রয়োজন মনে করে নি।
প্রথম আসি জাতীয়তা কি হবে এই আলোচনায়!! আপনি বলছেন দেশকে স্বাধীন করেছেন! অথচ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকারকে অস্বীকার করে?? বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ কি করে মূল নীতি হয়? এটা কি রেসিজমের এক্সটিম মাত্রা নয়?? যেখানে উর্দু ভাষী, শতাধিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠি রয়েছে যারা বাংলা ভাষী না! তবে কি করে আপনি ভাষাকে জাতীয়তাবাদের মূল ধরে নিলেন?? এটা থেকেই রেসিজমের শুরু!
পরে ৮৮% মুসলিমের দেশে ইসলামকে অস্বীকার করা ২য় চরম মাত্রার রেসিজম যা সংখ্যা গরিষ্ঠ জনতার বিরুদ্ধে আরোপিত হচ্ছে।
যদিও একটা সময় এই দুইটা বিষয়কে রেসিজমের আলাপে রাজি ছিলাম না! কিন্তু ২০১৫ সালে বিশ্বের স্বনামধন্য এক এনজিওর সাথে কাজ করার সুযোগে তাদের কাজকে জানার সুযোগ পেলাম। তারা উর্দু ভাষীদের নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু সেই প্রজেক্টের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা আমাকে বললেন এদের সব মেরে ফেলার দরকার! এরা সব সাপের বাচ্চা। আমি হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করে ফেললাম এটাই যদি বিশ্বাস হয় তবে তাদের নিয়ে কেন কাজ করছেন?? বললো মানবাধিকার ও ডোনার সংস্থা গুলো যাতে ভুল না বুঝে!!!
এবারে আসি একদম চরম দৃশ্যমান এক আলাপে! বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশা শুরু করেছিলো সেই নব্বইয়ের দশকে! অথচ মায়ানমারের স্বাধীনতার পেছনে কিন্তু এদের ব্যাপক অবদান রয়েছে!! এখানে সূত্রপাত তাদের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক চর্চায় বাধা প্রদানের মাধ্যমে। বিবাহ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে! তাদের সকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে। এই আমরা কতটা অসভ্য এবং পশুত্বের মধ্যে আবর্তিত তা প্রথম আরো ভালো ভাবে জানান দেয় ২০১৭ সালে। রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ে। যে আমরা ইসলামের কথা বলি, কুরআনের কথা বলি তাদের আসতে দিতে নিষেধ করলাম! তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রচারনার মাধ্যমে বন্ধ করলাম! তাদের বাধ্য করলাম অপরাধে জড়িয়ে পড়তে।
আমরা নিজেদের ইসলামের অনুসারী দাবি করি! কখনো ভেবেছি যখন হাজার হাজার মুসলিম মক্কা থেকে মদীনায় গিয়েছিলেন তখন কি প্রেক্ষাপট ছিলো!?? আমরা যদি মুসলমানই হতাম তবে কি এই আচরন করতে পারতাম??
গতকাল রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হলেন! তারাই ছিলেন শিক্ষার সুযোগ পাওয়া সর্বশেষ রোহিঙ্গা। অথচ ২০১৯ সালে কেন তিনি মায়ানমারে তাৎক্ষণিক প্রত্যার্পণের বিরোধিতা করলেন সেই জন্যে হাজারো বাঙ্গালী ফ্যাসিস্ট রেসিস্ট শুয়োর তাঁর মৃত্যুতে উচ্ছ্বাস করছে। মুসলিম আলাপন যদি বাদ দেই! তবেও তো তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের মারাত্নক ক্ষতি করলো। এই সহজিয়া আলাপনটাও এরা বুঝে না। এই বাঙ্গু মুসলিমরা সত্যিকারে সাদা চামড়ার রেসিস্টদের থেকেও জঘন্য। এক রোহিঙ্গা মেয়ে পড়াশুনা করে এগিয়েছিলো। তাও এই রেসিস্টদের প্রচারক বাপ "শুয়োরের আলো" মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে বন্ধ করলো।
এই রেসিস্টরা রোহিঙ্গাদের তাদের সেবক দেখতে চায়! তাদের মদ গাজার সংগ্রাহক দেখতে চায়! কিন্তু নতুন মহিব উল্লাহ কিংবা বিচারপতি আবু সাইদ কিংবা মুফতি দীন মোহাম্মাদ হিসেবে দেখতে চায় না। এদের মেয়েদের পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করতে চায়, তবে তাদের শিক্ষা দিয়ে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে সুস্থ জীবন যাপনের সুযোগ দিতে চায় না! কিন্তু এরপরে আবার বলতে চায় এরা কেন অপরাধে জড়িত হয়?? কেন সংঘাতে লিপ্ত হয়??
যদি এদের পড়াশুনার সুযোগ দেয়া হতো, যদি তাদের সুস্থ জীবন যাপনের অবকাশ দেয়া হতো, যদি তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো তবে বর্তমান সময়ে তাদের ফেরত পাঠিয়ে নিজেদের অধিকার বুঝে নেয়ার ব্যবস্থাই করা হতো। যা করেছে ভারত ১৯৭১ কিংবা পাকিস্তান আফগানিস্তানের জন্যে! কিংবা তুরস্ক আজারি কিংবা কাজাখদের জন্যে। তবে কিন্তু আজ সেখানেও আমাদের অবস্থান তৈরি হতো। সমস্যা হচ্ছে রেসিস্টরা যে কেবল মানসিক ভাবেই অসুস্থ এবং নোংরা তাই না, এরাই বুদ্ধি বৃত্তিক ভাবেও খুবই নিচু মানের!!
আর তাইতো এরা যেমনি পাহাড়িদের সাথে রেসিজমে লিপ্ত হয়, তেমনি হয় উর্দু ভাষীদের সাথে, তেমনি রোহিঙ্গাদের সাথে। তেমনি অঞ্চল ভেদে! চাকুরির অবস্থান ভেদে! সম্পদের ভিত্তিতে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে! শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে!
সোজা কথায় মার্কিন মূলুক কিংবা ইউরোপের রেসিস্টদের থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে হলো এই বাংলা মূলকের রেসিজম। এখানকার জনতা হোক সে ইসলাম জানা কিংবা না জানা, কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বী কিংবা শিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত কিংবা ধর্মীয় পন্ডিত বা আলিম সবাই আপাদমস্তক রেসিজমে আক্রান্ত।
জানি আজকের কথা গুলো অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এটাই সত্যতা। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
Comments
Post a Comment